সোনাদিয়া ইউনিয়নের পরিষদ তথ্য

সোনাদিয়া বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হাতিয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন।

আয়তন


সোনাদিয়া ইউনিয়নের আয়তন ৯০.৫২ বর্গ কিলোমিটার।
জনসংখ্যা
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সোনাদিয়া ইউনিয়নের জনসংখ্যা ৩৪,১৮৩ জন।

অবস্থান ও সীমানা


হাতিয়া উপজেলার পশ্চিমাংশে সোনাদিয়া ইউনিয়নের অবস্থান। এ ইউনিয়নের উত্তরে তমরদ্দি ইউনিয়ন, পূর্বে বুড়িরচর ইউনিয়ন, দক্ষিণে জাহাজমারা ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে হাতিয়া চ্যানেল ও ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়ন অবস্থিত।


প্রশাসনিক কাঠামো


সোনাদিয়া ইউনিয়ন হাতিয়া উপজেলার আওতাধীন ৮নং ইউনিয়ন পরিষদ। এ ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রম হাতিয়া থানার আওতাধীন। এটি জাতীয় সংসদের ২৭৩নং নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী-৬ এর অংশ। এ ইউনিয়নের গ্রামগুলো হল:

  • চর চেংগা
  • মাইজচরা
  • সোনাদিয়া

প্রতিষ্ঠাকাল


১৯৫৮ সালে তমরুদ্দিন ইউনিয়ন থেকে সোনাদিয়া ও বুড়িরচর ইউনিয়ন নামে আলাদা দুইটি ইউনিয়ন গঠিত হয়। 

নামকরণ


সোনাদিয়ার পূর্ব নাম ছিল নবাবপুর, তমরুদ্দিন ইউনিয়ন থেকে এ ইউনিয়ন পৃথক হলে আলী আহমদ মিয়া তার বাবা নবাব মিয়ার নামানুসারে নাম দেন নবাবপুর। এ নাম নিয়ে কালেক্টর অফিসে তৎকালীন মুসলিম লীগেরর সেক্রেটারী ও তৎকালীন নবাবপুরের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মিয়ার (মুসলিম লীগের সভাপতি) সাথে প্রচণ্ড বাক-বিতণ্ডা হলে কালেক্টরের হস্তক্ষেপে পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিয়ে সোনাদিয়া মৌজার নামানুসারে ইউনিয়নের নামকরণ করা হয়। সোনাদিয়া এত বেশি সোনালি ফসল হত, যার ফলে তার নামকরণ করা হয় সোনাদিয়া।

শিক্ষা ব্যবস্থা


২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সোনাদিয়া ইউনিয়নের স্বাক্ষরতার হার ৪১.৬%%।[৩] এ ইউনিয়নে ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি মাদরাসা এবং ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মাধ্যমিক বিদ্যালয়

  • এমসিএস উচ্চ বিদ্যালয়
  • সোনাদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়
  • মাইজদী বাজার উচ্চ বিদ্যালয়

মাদ্রাসা

  • চর চেঙ্গা ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসা
  • গণিয়া দাখিল মাদরাসা
  • সোনাদিয়া এ বারী দাখিল মাদরাসা

প্রাথমিক বিদ্যালয়

  • হৈকবাদা পশ্চিম চর চেংগা এম. হোসেনিয়া রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • দক্ষিণ সোনাদিয়া জয়নাল আবেদীন রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • উত্তর সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • পূর্ব মাইজচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • মধ্য মাইজচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • চরচেংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • দক্ষিণ সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • পূর্ব সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • দক্ষিণ পশ্চিম সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • পূর্ব চানন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • পশ্চিম সুখচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • উত্তর মাইজচরা বিসমিল্লাহ রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • দক্ষিণ চরচেংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • দক্ষিণ পূর্ব নলচিরা হাজী কালামিয়া রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • পশ্চিম মাইজচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • সোনাদিয়া ছকিনা রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • পূর্ব চরচেংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

 যোগাযোগ ব্যবস্থা


সোনাদিয়া ইউনিয়নে নৌপথে জাহাজ, সী ট্রাক ও ট্রলারের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যায়। স্থল পথে মটর সাইকেল, গাড়ি, রিক্সা, সাইকেল ও ট্যাক্সি দিয়ে যোগাযোগ করা হয়।

খাল ও নদী


সোনাদিয়ার পশ্চিমে রয়েছে মেঘনা নদী, যা ভোলা চ্যানেল দ্বারা পৃথক হয়েছে। এছাড়া এ ইউনিয়নের প্রধান দুইটি খাল হল সোনাদিয়া খাল এবং চেংগার খাল। খাল দুইটি পূর্ব দিকের মেঘনা নদী হতে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমের মেঘনার সাথে মিলিত হয়েছে।

দর্শনীয় স্থান


  • ঠুয়ার চর
  • বেড়ি বাঁধ
  • সুইজের বাজার
  • চরচেংগা লঞ্চঘাট
  • চৌরাস্তা বাজার ঘাট
  • মাইজদী বাজার বেড়িবাঁধ

জনপ্রতিনিধি 


বর্তমান পরিষদ

নাম পদবি নির্বাচিত এলাকা
মেহেদী হাসান চেয়ারম্যান  
রহমত উল্যাহ সাধারণ সদস্য ০১নং ওয়ার্ড
মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল সাধারণ সদস্য ০২নং ওয়ার্ড
মোঃ শামছুল ইসলাম সাধারণ সদস্য ০৩নং ওয়ার্ড
জিল্লুর রহমান সাধারণ সদস্য ০৪নং ওয়ার্ড
নিজাম উদ্দিন সাধারণ সদস্য ০৫নং ওয়ার্ড
সাখাওয়াত হোসেন সাধারণ সদস্য ০৬নং ওয়ার্ড
    মোঃ মোজাহার উদ্দিন সাধারণ সদস্য ০৭নং ওয়ার্ড
মাহফুজুল হক সাধারণ সদস্য ০৮নং ওয়ার্ড
আলতাফ হোসেন সাধারণ সদস্য ০৯নং ওয়ার্ড
সুলতানা আকতার সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ০১, ০২ ও ০৩নং ওয়ার্ড
হোছনা বেগম সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ০৪, ০৫ ও ০৬নং ওয়ার্ড
আরজুমা বেগম সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ০৭, ০৮ ও ০৯নং ওয়ার্ড

 

 

 

সোনাদিয়া ইউনিয়নের ইতিবৃত্তঃ  

 

সোনাদিয়া ইউনিয়নের পরিচিতিঃ সোনাদিয়া ইউনিয়নটি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অধীন একটি ইউনিয়ন। আদমশুমারী ২০১১ তথ্য মতে সোনাদিয়ার আয়তন ৩১.৫ বর্গ কিলোমিটার, জনসংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার, শিক্ষার হার ৩৬.৯৬%। তিনটি মৌজা চরচেংগা, মাইজচরা ও সোনাদিয়া মৌজার সমন্বয়ে ইউনিয়নটি গঠিত হলেও সোনাদিয়া মৌজার নামে ইউনিয়নটির নামকরন করা হয়। হাতিয়া উপজেলার মোট ১১ টি ইউনিয়নের মধ্যে এটির অবস্হান ৮ নম্বরে। ইউনিয়নটিতে মোট ৯ টি ওয়ার্ড রয়েছে। ৯ নং ওয়ার্ডের আয়তন ও জনসংখ্যা মোট ইউনিয়নের অর্ধেক। তাই ৯ নং ওয়ার্ডটি আলাদা একটি ইউনিয়নের মর্যাদা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। তবে এ ওয়ার্ডের শিক্ষা হার ও অবকাঠামোর অবস্হা নাজুক থাকায় এখানে সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তদের আড্ডা খানায় পরিনত হয়েছে।

সীমানাঃ  সোনাদিয়ার পশ্চিমে মেঘনা নদী, দক্ষিণে জাহাজমারা ইউনিয়ন , পূর্বে বুডিরচর ইউনিয়ন এবং উত্তরে তমরুদ্দিন ইউনিয়ন।

পটভূমি: হাতিয়ার বয়স তিনহাজার বছর হলেও সোনাদিয়ার বয়স ৫০০-৬০০ বৎসর হবে তবে জনবসতি গড়ে উঠেছে আনুমানিক ২৫০-২৩০ বৎসর পূর্বে।জেমস রেনেল (১৭৮০) হাতিয়ার চর গুলোর তেমন বিবরন দেননি তবে শাহাবাজ পুরের বিবরন দিয়েছেন।১৮২০ সালে হান্টার রিপোর্টে শাহবাজপুরের পাশে হাতিয়ার দক্ষিণ পশ্চিমে একাধিক চরে জেগেছে বলে উল্লেখ করেন সে হিসেবে বলা যায় সোনাদিয়া ও ভোলা প্রায় সম বয়সি চর । ১৯৫৮ সালে তমরুদ্দিন ইউনিয়ন হতে সোনাদিয়া ও বুড়িরচর আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র দুইটি ইউনিয়ন গঠিত হয়। সোনাদিয়া ইউনিয়নের ১ম প্রেসিডেন্ট হন হাজী আলী আহম্মদ মিয়া। তিনি বৃটিশ আমল ১৯৩২ সাল থেকে ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, ১৯৫৯-১৯৬১ সালে মৌলিক গনতন্ত্রীর সময় ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং পরবর্তী ১৯৬২-৬৭ সাল পর্যন্ত ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন। সব মিলিয়ে তিনি দীর্ঘ ৩৫ বৎসর চেয়ারম্যান ছিলেন তমরুদ্দিন ও সোনাদিয়া ইউনিয়নের। তিনি ছিলেন জন দরদী নেতা ও সোনাদিয়া ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা।

সোনাদিয়া ইউনিয়নের নামকরন: সোনাদিয়ার পূর্ব নাম ছিল নবাবপুর, তা হতে সোনাদিয়া নামকরন বেশি দিনের নয়। তমরুদ্দী হতে এ ইউনিয়ন পৃথক হলে হাজী আলী আহমদ মিয়া তার বাবা নবাব মিয়ার নামানুসারে নাম দেন নবাবপুর । মকসুদ মিয়া তা মেনে নিতে পারেননি। মকসুদ মিয়া সোনাদিয়ার নামকরন করেন। তাছাড়া সে সময় নামকরন করা হত বিখ্যাত ও বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের নামানুসারে।সে অনুসারে সোনাদিয়ার পূর্ব নাম ছিল নবাবপুর।এ নাম নিয়ে তৎকালীন মুসলিম লীগের সেক্রেটারী ও তৎকালীন নবাবপুরের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মিয়ার (মুসলিম লীগের সভাপতি) সাথে প্রচন্ড বাক-বিতান্ড হয় হয় কালেক্টর অফিসে।পরে কালেক্টরের হস্তক্ষেপে পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিয়ে সোনাদিয়া ইউনিয়নের নামকরন করা হয়। এ চরে এত বেশি সোনালি ফসল হত বলে তাই তার নামকরন করা হয় সোনাদিয়া।অর্থাৎ সোনালি ফসলে দিয়ে ভরপুর ছিল বলে সোনাদিয়ার নামকরন করা হয়।

উল্লেখযোগ্য স্হানের নামকরনঃ স্বাধীনতার পূর্বে চর চেংগা বাজারে হাট বসত।এটি সোনাদিয়া ইউনিয়নের প্রাচীন বাজার।কারন তখনকার সময়ে মানুষ নৌকা দিয়ে চলাফেরা করত। চর চেংগা বাজারটি মেঘনা নদীর তীরে এবং চেংগার খালের পাশে ছিল বলে এ বাজারে ব্যবসা বানিজ্য গড়ে উঠেছিল। লৌকিকভাবে বিবরন আছে যে মঙ্গলীয় নেতা চেংগীস খান নৌ যাত্রা পথে এ বাজারে এসেছেন বলে তার নামুসারে চর চেঁংগা নামকরন করা হয়। আদি হাতিয়ার মাইজচরার অধীবাসিরা নদী ভাঙ্গনের পরে এ অঞ্চলে বসবাস শুরু করে।তাদের পূর্বের ঐতিহ্যকে ধারন করে মাইজচরা নামকরন করা হয়। স্বাধীনতার পরবর্তীতে মাইজদী বাজার গঠিত হয়।৬ টি পয়েন্টের মাঝখান ছিল বলে এটি মাইজদী বাজার নামকরন করা হয়।আশির দশকে বাংলা বাজারের হাট বসানো হয় তৎকালীন চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক। রাজনৈতিক সুবিধার্থে তিনি এ বাজার প্রতিষ্ঠা করেন তবে কেন বাংলা বাজার দিল তা জানা যায়নি।এছাড়াও চার রাস্তার মাথায় বাজার উঠেছে বলে চৌরাস্তা বাজার নামকরন করা হয়, জবেদ আলী মিয়ার নামানুসারে জবেদআলী বাজার নামকরন করা হয়। সেকু মেম্বারের নামানুসারে সেকু মার্কেট নামকরন করা হয়।মানিক বাজারের বর্তমান নাম সোনাদিয়া বাজার।সোনাদিয়া ইউনিয়নের নামানুসারে এ বাজারের নামকরন করা হয়।সুইজ গেটের নামানুসারে সুইজের বাজার নামকরন করা হয়, খাল পাড়ে কেনঞ্জা গাছের আধিক্যের কারনে নামকরন করা হয় কেনঞ্জাখালী বাজার এবং মনিদুল হকের নামানুসারে মদিন নগর নামকরন করা হয়। মদিন নগরের পূর্ব নাম ছিল ১৮-২০। ম্যাজিষ্ট্রেট হিলটনের নামে একটি রাস্তা হিলটন রোড় রাখা হয়।